সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বৈধতা নেই। সরকার যে অন্যায় করছে তাদের নৈতিক অন্যান্য অধিকার আর নেই। এই সরকারের আর কোনো অধিকার নেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অচলাবন্থা নিরসনের দাবিতে’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সুজন সম্পাদক বলেন, আমার মনে হয় আমরা সেই দিকে যাবো। আমাদের পরিস্থিতি যেভাবে জটিল হচ্ছে, যদি এটার শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান না হয়, যদি একটা যৌক্তিক সমাধান না হয়, দেশটাকে কারাগারে যে পরিণত করা হয়েছে, খুন-খারাপি হয়েছে এগুলোর বিচার যদি না হয়, তাহলে আমরা সেদিকেই যাবো। ক্রমান্বয়ে আমরা সেদিকেই যাচ্ছি।
কোন দিকে যাচ্ছে? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই সরকারের তো বৈধতা নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। শুধু তাই নয়, তারা যে অন্যায় করছে তাদের নৈতিক অন্যান্য অধিকার আর নেই। এখন আস্তে আস্তে আমরা সবাই যখন সোচ্চার হবো, আমরা সেদিকেই যাবো।
সেদিকটা কী? সাংবাদিকরা এমন পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আলটিমেটলি এই সরকারের আর কোনো অধিকার নেই তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার। আমরা চাই একটা শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা যৌক্তিক সমাধান এবং এসব অন্যায়ের সবগুলোর বিচার যেন হয়। আমরা চাই একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান আসুক।
আপনারা কী ধরনের সরকার চান? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সকল বিচার হবে, সকল অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটবে এবং আমরা সুন্দর একটা গণতান্ত্রিক আন্তনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাপূর্ণ সেই ধরনের একটা সরকার চাই। গণতান্ত্রিক, জবাবদিহীমূলক সরকার চাই। আমরা কারও পক্ষেও নেই, কারও বিপক্ষেও নেই।
এর আগে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০০৮ সালে তরুণদের ভোটেই আওয়ামী লীগ ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করেছিল। এখন এই তরুণরাই আওয়ামী লীগের বিপক্ষে চলে গেছে। সরকারি দলের কর্মী না হলে সরকারি বা বেসরকারি চাকরি পাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এমনকি ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনের অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারকে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এ সরকার জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় না আসায় তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এ কারণে তারা বল প্রয়োগ করছে।
সুজন সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, এটা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। পুলিশি গ্রেপ্তার দিয়ে না, আইন-আদালত দিয়ে না, এটা ছাত্রলীগ দিয়ে না। রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার তাৎপর্য আমাদের থাকতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যা, সো পলিটিক্যালি এটাকে মোকাবেলা করতে হবে, পলিটিক্যালি সলভ করতে হবে।
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, কোটা বৈষম্য দূরীকরণের এ আন্দোলন এখন আর শুধুমাত্র ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এরশাদের সময়ও একসঙ্গে এত মানুষ হত্যা হয়নি। আমরা এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় বলতাম, তার হাতে ছাত্রের রক্ত। এখন আওয়ামী লীগের হাতেও ছাত্রদের রক্ত। ছাত্রদের কোনো আন্দোলন কখনো বৃথা যায়নি। এ আন্দোলনও বৃথা যাবে না।
সুজন সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কোটা বৈষম্য দূরীকরণের দাবিতে সৃষ্ট আন্দোলনের মাধ্যমে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি নিরসনে সরকারের আন্তরিকতা দেখতে পাচ্ছি না। সরকার প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ আন্দোলনে যে পরিমাণ মানুষ মারা গেছেন, তাকে ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই। এবার যদি আমরা বিচার না পাই, তাহলে এ দেশ থেকে বিচার শব্দটাই উঠে যাবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকার, শান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।