ছাত্রদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত এইচএসসিতে অংশ নেবেন না ১১ কলেজের পরীক্ষার্থী

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ১১ কলেজের শিক্ষার্থীরা চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা, হামলা ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি না মানা পর্যন্ত চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছেন।  

নিজ নিজ কলেজের নামে খোলা ফেসবুক গ্রুপে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) পোস্ট করে পরীক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন।


কলেজগুলোর মধ্যে রয়েছে- টাঙ্গাইলের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজ, বিবেকানন্দ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী (এমএম আলী) কলেজ, কুমুদিনী সরকারি কলেজ, সরকারি শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়, সৃষ্টি কলেজ অব টাঙ্গাইল, ভূঞাপুর ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজ, এলেঙ্গার সরকারি শামসুল হক কলেজ, সখীপুর সরকারি মুজিব কলেজ, মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজ, কালিহাতী শাহজাহান সিরাজ কলেজ।  

এছাড়াও ওই ১১ কলেজের শিক্ষার্থীদের ঘোষণায় সমর্থন জানিয়ে জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।


সৃষ্টি কলেজ অব টাঙ্গাইলের ফেসবুক গ্রুপে দেওয়া ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা লিখেছেন, ‘জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে ডিবি অফিসে হাতে স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে জোরপূর্বক সমন্বয়কারীদের দ্বারা যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তা এদেশের ছাত্রসমাজ প্রত্যাখান করেছে। আমরা আমাদের ভাই-বোনদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং দেশব্যাপী চলমান হেনস্তার সুষ্ঠু জবাব ও বিচার চাই। ’


মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা লিখেছেন, ‘যতদিন পর্যন্ত না সকল অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারকৃত এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও অন্যান্যদের মুক্তি দেওয়া হয় ততদিন পর্যন্ত শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের কোনো পরীক্ষার্থী ঢাকা বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না। ’


প্রায় একই রকম ঘোষণা দিয়েছেন কুমুদিনী সরকারি কলেজ, সরকারি শেখ ফজিলাতুন নেসা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজ, বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি মাওলানা মোহাম্মদ আলী(এমএম আলী) কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া একই দাবিতে জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে একই বিবৃতি দেয়।


নাম প্রকাশ না করে একাধিক পরীক্ষার্থী জানায়, চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছে। এছাড়া আন্দোলনের কারণে এইচএসসি শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেভাবে নিহত হয়েছেন তার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার এবং গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন না।


টাঙ্গাইল শহরের মেজর জেনারেল(অব.) মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের এই ধরনের কোনো বিষয় তার জানা নেই। আগামী ১১ আগস্ট পুনঃসময়সূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে- সে বিষয়ে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।  


ভূঞাপুর ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান সরকারও একই কথা বলেন। তিনি জানান, এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা এখন বোর্ডের অধীনে ন্যস্ত।


এ বিষয়ে একাধিক কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা লিখিত বা মৌখিকভাবেও জানায়নি। হঠাৎ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো উপযুক্ত কারণও তারা জানেন না।


এর আগে দুই দফায় চারদিনব্যাপী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রথম ধাপে ১৮ জুলাই এবং দ্বিতীয় ধাপে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়