ঢাকার নিম্ন আদালতে সকালে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুরে পর দুপুরে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বই, ছবি ও প্রতিকৃতিতে আগুন দিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
সকাল থেকে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবন, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও আদালতগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে তাদের বই, ছবি ও প্রতিকৃতি খুঁজে বের করে সেগুলো ভেঙেচুরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বার সমিতির ছয়তলায় আইনজীবীদের লাইব্রেরিতে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় লাইব্রেরির ভেতরে তারা বঙ্গবন্ধু কর্নারে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেন বিএনপিপন্থি তরুণ আইনজীবীরা।
বঙ্গবন্ধু কর্নার থেকে বইগুলো বের করে এনে আইনজীবী সমিতির সমানে স্তূপ করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
দেখা যায়, আদালতপাড়ার যেসব স্থানে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম খোদাই ছিল, সেগুলো মুছে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, তরুণরা যা করছেন, আমরা তাতে বাধা দিলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হবে।
বিএনপির আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বই পোড়ানোর বিষয়ে বলেন, “আমি তো কিছু জানি না। আপনি আমাকে জানিয়েছেন, ভালো হয়েছে। আমি দেখব।”
এর আগে ঢাকার মহানগর দারা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু, দুদকের জ্যেষ্ঠ কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল, ঢাকা বারের বর্তমান কার্যকরী পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনেঅয়ার শাহাদাত শাওন, সহসভাপতি আবু তৈয়ব, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কনিষ্ঠ আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম বাহারের চেম্বার ভাঙচুর করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
অরক্ষিত আদালতপাড়া
আদালতপাড়ায় মঙ্গলবার পোশাক পরিহিত কোনো পুলিশকে দেখা যায়নি। সিএমএম আদালতসংলগ্ন মূল কোর্ট হাজত, মহানগর দায়রা আদালতের নিচে পুরুষ কোর্ট হাজত, নারী কোর্ট হাজত, ঢাকার জেলা ও দায়রা জজের কোর্ট হাজত, ঢাকার সিজেএম আদালতের কোর্ট হাজত পুরোটাই ছিল অরক্ষিত।
কারাগার থেকে কোনো প্রিজন ভ্যান আসেনি, কোনো আসামিকেও আদালতে আনা হয়নি। কিন্তু ফৌজদারী মামলা বিশেষত রাজনৈতিক মামলায় জামিনের হিড়িক দেখা গেছে। আইজীবীদের লাইন দিয়ে জামিননামা কিনতে দেখা গেছে।
গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর পুরো পরিস্থিতি বিক্ষোভকারী ছাত্র-জনতার দখলে যায়। গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ঢুকে ভাঙচুর করা হয়।
দুপুরের পর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলার খবর এসেছে, ভাঙচুর করা হয়েছে প্রধান বিচারপতির বাসভবন। মঙ্গলবারও যার জের দেখা গেছে।
ঘটনাবহুল সোমবারের পর মঙ্গলবার অন্তর্বতী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে যায়। ভেঙে দেওয়া হয় পার্লামেন্ট।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান রাখা হয়েছে।