আইএমএফ’র পরামর্শে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালুর পর প্রায় দুই মাস ধরে কিছুটা স্থিতিশীল ছিল মার্কিন মুদ্রা ডলারের দাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সাধারণ ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অস্থিরতায় দেশে খোলাবাজারে নগদ ডলারের দামে হঠাৎ অস্থিরতা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে রেমিট্যান্স বিরোধী প্রচারণা শুরুর পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে এই মুদ্রার দাম। এর প্রভাবে খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে ডলারের দাম। গতকাল ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২৫ টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে কার্ব মার্কেটে ডলারের দর নির্ধারণ করে দিয়েছে মানি চেঞ্জারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সংগঠনটি খুচরা প্রতি ডলারের মূল্য সর্বোচ্চ ১১৯ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর চেয়ে বেশি ডলার বিক্রি করলেই ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। বুধবার সংগঠনটির সভাপতি এমএস জামান সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ব্যাংকাররা জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক অস্থিরতার প্রভাব ডলার বাজারে পড়েছে। অন্যদিকে সরকারের দমন-পীড়নের প্রতিবাদে একটি পক্ষ বৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠাতে প্রচারণা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় হুন্ডি বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে বাড়তি দরে রেমিট্যান্স কিনতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইএমএফ’র পরামর্শে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে গত ৮ই মে ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা মধ্যবর্তী দর ঠিক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ সিদ্ধান্তের পর স্থিতিশীল ছিল বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। তবে গত কয়েক দিনে ঢাকার খোলাবাজারে বা মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানে প্রতি ডলারের দাম ৩/৪ টাকা বেড়ে ১২৪-১২৫ টাকায় উঠেছে। দুই সপ্তাহ আগেও ডলারের দাম ১১৮-১১৯ টাকার মধ্যে ছিল। এদিকে ব্যাংকগুলোও বাড়তি দরে রেমিট্যান্স কিনছে। তারা কিনেছে ১১৯ টাকা ৬০ পয়সায়। খোলাবাজারে দর নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন মানিচেঞ্জারে অভিযান শুরু করেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণেই মূলত খোলাবাজারে প্রভাব পড়েছে।
মানি চেঞ্জারের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ফেরার সময় প্রবাসীরা নিজেদের সঙ্গে করে যে ডলার নিয়ে আসেন, সেগুলো খোলাবাজারে বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশ থেকে মানুষ আসা কমে যাওয়ায় ডলারের সরবরাহও কমেছে। এতেই ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে দাম বেড়ে গেছে।
একটি মানি চেঞ্জারের কর্মকর্তা বলেন, সোমবার তারা ১২১ টাকা ৬০ থেকে ৭০ পয়সায় ডলার কিনে বিক্রি করেছেন ১২২ টাকায়। টানা ৫ দিন পর গত বুধবার অফিস খোলার পর ডলারের বাড়তি চাহিদার কারণে দর বাড়তে শুরু করে। ওইদিন তারা ১২১ টাকা থেকে ১২১ টাকা ১০ পয়সায় কিনে বিক্রি করেন ১২১ টাকা ৫০ পয়সা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে এ পর্যায়ে উঠেছে।
ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক গণ্ডগোলের সুযোগে দাম বাড়ানো হয়েছে। চার-পাঁচদিনের মধ্যে তা আবার কমে আসবে।
জানা গেছে, খোলাবাজারে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি ডলার ১১৮-১১৯ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হতো। নগদ ডলারের দাম কয়েক মাস ধরে এ রকম ধারাতেই ছিল। তবে ছাত্র আন্দোলনের পর গত সোমবার তা বেড়ে ১২২ টাকায় উঠে, যা এখন ১২৫ টাকায় পৌঁছায়।
রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে ডলার কিনতে আসা খায়রুল জানান, দেশের বাইরে যাবো। খরচের জন্য নগদ ডলার কিনতে মানি চেঞ্জারে এসেছি। কিন্ত ডলার ১২৪ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এই রেটেই কিনলাম। কারণ শুনলাম দাম আরও বেড়ে যাবে।
একজন ব্যাংকার বলেন, রেমিট্যান্স কমে আসার প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারে। ফলে আগের চেয়ে হুন্ডিতে বেশি আয় পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। একশ্রেণির বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বিদেশে বসে বেশি দামে প্রবাসী আয়ের সেই ডলার কিনে নেন। এর বিনিময়ে তারা দেশে প্রবাসীদের পরিবার বা উপকারভোগীকে টাকা দেন। এতে ডলার বিদেশেই থেকে যায়। এ ছাড়া অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নগদ ডলার কিনে রাখছেন বলে জানা গেছে। এটাও বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।