কক্সবাজারের ১০ দিনে ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা

কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো সমুদ্রকেন্দ্রিক। সারাবছর এখানে কমবেশি পর্যটক থাকে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে এ পর্যটন অঞ্চলের প্রতিটি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে থমকে যায় সমুদ্রশহরের প্রত্যেকটি পর্যটন স্পট। এতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ গড়ে ৫ কোটি টাকারও বেশি। সংশ্লিষ্টদের তাদের দাবি, এমনটা চলতে থাকলে কক্সবাজারের পর্যটনখাত অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে।


নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় থাকে উপচে পড়া। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতেই প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে এখানকার পর্যটনখাত বড় ধাক্কার মুখে পড়ে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষত শুকিয়ে সব গুছিয়ে ওঠার আগেই ফের বড় ধাক্কার মুখে পড়তে হয়। দেশের সহিংস পরিস্থিতি আর কারফিউয়ের কারণে বিরাট বিপর্যয়ে পড়ে কক্সবাজারের পর্যটন। গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টে তেমন পর্যটক নেই। বুকিংও পড়েনি।


কক্সবাজারের ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে ধারণ ক্ষমতা ২ লাখেরও বেশি। ছুটির দিনগুলোতে লাখো পর্যটনের সমাগম ঘটে থাকে এখানে।


কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটে নিস্তব্ধতা চারদিকে। হোটেল-মোটেল খালি পড়ে আছে। ৫ শতাধিক রেস্তোঁরা ও ৫ হাজারের বেশি দোকানে বেচাবিক্রি নেই । সৈকতের ঐতিহ্যবাহী ঝিনুক মার্কেট, ছাতা মার্কেটসহ আশেপাশের বেশির ভাগ ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সমুদ্রসৈকতে সারি সারি বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক (জেটস্কি) থাকলেও বেশিরভাগই চালক নেই। সড়কের মোড়ে মোড়ে ছাদ খোলা ট্যুরিস্ট জিপ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও রিকশাচালকরা গল্প, আড্ডায় সময় পার করছেন।


এমন পরিস্থিতিতে লোকসানে পড়েছেন ট্র্রাভেল এজেন্সি, হোটেল-মোটেল রেস্তোঁরাসহ সংশ্লিষ্ট শতাধিক খাতের উদ্যোক্তরা।


গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারে পর্যটক নেই। কক্সবাজারে পর্যটক আসার উপর নির্ভর করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুসের জীবন জীবিকা। পর্যটক না থাকলে আয় বন্ধ।


কক্সবাজারের পযর্টন হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন মোটেও পযর্টক নেই। কাজের লোকজনসহ ২ শতাংশ পর্যটক আছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর খুবই নাজুক অবস্থা। হোটেলের কর্মচারীসহ প্রতিদিন আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।


কক্সবাজার হোটেল—মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ‘১৬ জুলাই থেকে কক্সবাজারে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পযর্টনখাতে প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে কারফিউ চলার কারণে দূর দূরান্তের পর্যটক কক্সবাজারে আসতে পারছেন না। যারা আকাশপথে আসছেন তারা কোন না কোন কাজে আসছেন বা সংখ্যামাত্র কিছু লোক এসে ভ্রমণ করে যাচ্ছেন। তারা কিন্তু থ্রি-ফোর স্টার মানের হোটেলে থাকছেন। এতে মধ্যমানের হোটেল ব্যবসায়ীরা খুবই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।


ওই সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘পর্যটনশহর কক্সবাজারে আশানুরূপ পর্যটক থাকলে প্রতিটি খাতে ভালো ব্যবসা বাণিজ্য হয়। এ জেলার মানুষ পযর্টনের উপর নির্ভরশীল বললেই চলে। কিন্তু এখন পযর্টক নেই। সবকিছুতে লোকসান আর লোকসান। করোনার পর এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কক্সবাজারের পর্যটনের জন্য অনেক বড় ধাক্কা।’


কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘কোনো পর্যটক কক্সবাজার এসে ৩ থেকে ৪দিন অবস্থান করে হোটেল-রেস্তোঁরায় থাকা-খাওয়া এবং অল্পস্বল্প কেনাকাটা ও যানবাহন ভাড়াসহ পযর্টন খাতে প্রতি একজনে ১০ হাজার টাকার ব্যবসা হতে পারে। এই হিসেবে আমরা পর্যটন খাতের লাভ-লোকসানের হিসেবটা করি। এ নিয়ে বলা যায়, গত ১০ দিনে কক্সবাজারের পযর্টন খাতে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা সকলেই চাই, কক্সবাজারের পযর্টন খাত দ্রুত সময়ে আবারো চাঙা হোক।’